নেটওয়ার্ক কি? ও কি উপায়ে প্রক্রিয়া করণ, প্রেরণ বা সঞ্চালন ? যোগাযোগ ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দাও






নেটওয়ার্ক ও টেলিযোগাযোগ উপায়ে তথ্যের প্রক্রিয়া করণ, প্রেরণ বা সঞ্চালন :

টেলিযোগাযোগ (Telecommunication) : টেলিযোগাযোগ শব্দের অর্থ কী? প্রাচীন গ্রীক শব্দ Tele’ অর্থ ‘Far’ যা বাংলায় ‘দূর বা দূরবর্তী’ অর্থ বুঝায়। এবং যোগাযোগ বা ‘communication’ অর্থ দুই ব্যক্তি বা প্রান্তের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করাকে বুঝায়। সুতরাং টেলিযোগাযোগ বলতে” দূরবর্তী অবস্থানে থাকা দুই ব্যক্তি বা প্রান্তের মধ্যে তথ্য বা ভাবের আদান-প্রদানকে বুঝায়। বাস্তবে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রান্তের সাথে বর্তমানে টেলিযোগাযোগ সম্ভব। ব্যাপক অর্থে, দূরবর্তী বা দূর বলতে স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করা যায় এমন দূরত্বের চেয়ে বেশী দূরত্বকে বুঝাবে। প্রকৃত পক্ষে, টেলিযোগাযোগ হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে স্বাভাবিক দূরত্বের চেয়ে বেশী দূরত্বের দুই প্রান্তের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান করা যায়। আবার Communication বলতে বৈদ্যুতিক উপায়ে তথ্যের প্রক্রিয়া করণ, প্রেরণ বা সঞ্চালন -: এবং গ্রহণ প্রক্রিয়াকে বুঝিয়ে থাকে।

লিযোগাযোগ সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক কে বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও বিষয়ভিত্তিতে অনেক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: = রিসিপশন বিন্দু সাপেক্ষে টেলিকম সিস্টেম দুই প্রকার। যথা- (১) এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দু বা পয়েন্ট টু পয়েন্ট যোগাযোগ : যদি সরাসরি একটি রিসিভার থেকে একটি ট্রান্সমিটারে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠে তবে তাকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট যোগাযোগ বলে। আমাদের সাধারণ টেলিফোন বা সেল ফোন এই ধরনের ব্যবস্থা। (২) এক বিন্দু থেকে বহু বিন্দু বা পয়েন্ট টু মাল্টিপয়েন্ট যোগাযোগ : একটি ট্রান্সমিটারে থেকে বহু রিসিভারে যোগাযোগ ব্যবস্থা । যেমন- রেডিও এবং টেলিভিশন। ট্রান্সমিশন মাধ্যম ভিত্তিতে টেলিকম সিস্টেম দুই প্রকার। যথা- (১) ওয়ারলেস বা তার বিহীন যোগাযোগ : এই ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বাতাসের মাধ্যমে ট্রান্সমিটার থেকে রিসিভারে ঘটে থাকে। এটি পয়েন্ট টু পয়েন্ট বা পয়েন্ট টু মাল্টিপয়েন্ট হতে পারে। সাধারণত পয়েন্ট টু মাল্টিপয়েন্ট হয়ে থাকে। যেমন- রেডিও, টিভি, স্যাটেলাইট WLL ইত্যাদি।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ধারণার সংজ্ঞা (Definitions) : টেলিফোন সিস্টেমে নেটওয়ার্ক বলতে অনেকগুলি ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের আন্তঃসংযোগ বুঝায়। সিস্টেমের মধ্যে অবস্থিত আরও অন্যান্য ডিভাইস এবং সুইচিং যন্ত্রপাতির মাধ্যমে আন্তঃসংযোগ হয়ে থাকে। তবে আজকাল নেটওয়ার্ক বলতে এক সাথে অনেক টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, অনেক কম্পিউটার এর আন্তঃসংযোগ বুঝায়। ডিজিটাল নেটওয়ার্ক এর সংযোগের ধরণ এনালগ নেটওয়ার্কের সংযোগের ধরন থেকে পৃথক। তবে উভয় প্রকার নেটওয়ার্ক এর ক্ষেত্রেই রিপিটার, অ্যামপ্লিফায়ার (বিবর্ধক),পরিবাহী লাইন বা মিডিয়াম আবশ্যক। একটি নেটওয়ার্কের চিত্র নিচে দেওয়া হলো। এখানে মনে রাখা দরকার যে, বর্তমানে নেটওয়ার্ক শব্দ দ্বারা যোগাযোগের উদ্দেশ্যে অনেক কম্পিউটার ও সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের আন্তঃসংযোগকে বুঝায়। যেমন- লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট ইত্যাদি।

ব্যান্ড এবং ব্যান্ড উইথ (Band and Bandwidth) : টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যান্ড বলতে- রেডিও ফ্রিকুয়েন্সির মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট রেঞ্জের ফ্রিকুয়েন্সি বা ওয়েভ লেন্থ কে বুঝায়। বিভিন্ন ভাবে এর নাম করণ করা হয়, যেমন: এ,এম ব্যান্ড (530 থেকে 1610 বা 1710 কিলোহার্জ পর্যন্ত।), এফ এম ব্যান্ড (88-108 মেগাহার্জ), এল ব্যান্ড (1452- 1492 মেগাহার্জ), কে, ইউ ব্যান্ড (27-40 গেগা হার্জ) ইত্যাদি। তবে ব্যান্ড শুধূ পরিচিতি নাম হিসাবে ব্যবহার করা হয়। হিসাব নিকাশ এর জন্যে ব্যান্ড উইথ (Bandwidth) কার্যকর। একটি ব্যান্ডের মধ্যে অনেক ফ্রিকুয়েন্সি রয়েছে। ফলে একটি ব্যান্ডের মধ্যে একাধিক ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবধানে চ্যানেল থাকতে পারে। যেমন: এ,এম ব্যান্ডের বিস্তৃতি (1610-530) 1080.কিলোহার্জ। যদি 10 কিলোহার্জ ব্যবধানে এক একটি চ্যানেল হয় তবে এই ব্যান্ডে 108টি চ্যানেল থাকবে। প্রতিটি চ্যানেলই এএম ব্যান্ডের অন্তর্গত।

চ্যানেল ও চ্যানেল ক্যাপাসিটি: মাধ্যমের ভিতর দিয়ে যতগুলি আলাদা আলাদা তথ্য একযোগে পাঠানো যায় সেই সংখ্যাকে বলা হয় ঐ মাধ্যমের চ্যানেল ক্যাপাসিটি। এবং প্রতিটি আলাদা তথ্য প্রবাহের পথকে বলা হয় চ্যানেল। যেমন: একটি বড় পাইপের ভিতর যদি 10টি ছোট ছোট পাইপ থাকে তবে ছোট পাইপের ভিতর দিয়ে 10 টি আলাদা আলাদা রং এর পানি প্রবাহিত করা যাবে। এখানে বড় পাইপটি পানি প্রবাহের মাধ্যম এবং প্রতিটি ছোট পাইপ হচ্ছে এক একটি চ্যানেল। মাধ্যমটির চ্যানেল ক্যাপাসিটি হচ্ছে 10। চ্যানেলকে প্রতি জনের জন্য একটি চলার পথের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। অনেকের আলাদা আলাদা চলার পথ একত্র হয়ে একটি মহাসড়কে পরিণত হয়। যত গুলি ছোট পথ একত্র হয়ে একটি মহাপথ হয় তখন ঐ মহাপথের ক্যাপাসিটি হচ্ছে ছোট পথ গুলির সমষ্টি। এটিই চ্যানেল ক্যাপাসিটি। ডাটা কমিউনিকেশনের বেলায় চ্যানেল ক্যাপাসিটির ধারণা একটু ভিন্ন। যেমন- কোন ট্রান্সমিশন চ্যানেলের মধ্যদিয়ে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ যত বিট অবিকৃতভাবে প্রবাহিত হয় তাকে ঐ চ্যানেলের ক্যাপাসিটি বলে। এর অপর নাম বিট রেট বা বিট/সেকেন্ড। এই ক্ষেত্রে কোন চ্যানেলে ব্যান্ডউইথ যদি B হয় এবং সিগন্যালের লেভেল যদি L হয় তবে নিকোয়েস্ট এর থিউরি অনুসারে সর্বোচ্চ ৬াটা রেট হবে, R = 2BLog2L, যা ঐ চ্যানেলের চ্যানেল ক্যাপাসিটি।

ট্রান্সমিটার (Transmitter) : ট্রান্সমিটারের উদ্দেশ্য হলো চ্যানেলে ট্রান্সমিশনের জন্য রেডিও ওয়েভ উৎপন্ন করা। একটি ট্রান্সমিটারের গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্টগুলো হলো মাইক্রোফোন (ট্রান্সডিউসার), অডিও অ্যামপ্লিফায়ার, অসিলেটর এবং মড্যুলেটর। defesa COTTON মাইক্রোফোনের সাহায্যে সাউন্ড ওয়েভকে ইলেকট্রিক্যাল ওয়েভে পরিণত করা হয় যার ফ্রিকুয়েন্সি মূল সিগনালের অনুরূপ হয়। এই দুর্বল সিগনালের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য মাইক্রোফোনের আউটপুটকে একটি মাল্টিস্টেজ অডিও অ্যামপ্লিফায়ারে প্রয়োগ করা হয়। সর্বশেষ অডিও অ্যামপ্লিফায়ার হতে বিবর্ধিত আউটপুটকে মড্যুলেশনের নিমিত্তে মড্যুলেটরে প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে অসিলেটরটি ক্যারিয়ার ওয়েভ নামে একটি হাই ফ্রিকুয়েন্সি ওয়েভ উৎপন্ন করে। সচরাচর এ কাজের জন্য একটা ক্রিস্টাল অসিলেটর ব্যবহৃত হয়।রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি অ্যামপ্লিফায়ার স্টেজের সাহায্যে ক্যারিয়ার ওয়েভের পাওয়ার লেভেলকে উপযুক্ত পরিমাণে বাড়ানো হয়। যার মান বেশ কয়েক কিলোওয়াট হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট দূরত্বে সিগনাল ট্রান্সমিট করার জন্য এরূপ হাই পাওয়ার দরকার হয়। বিবর্ধিত অডিও সিগনাল এবং ক্যারিয়ার ওয়েভ উভয়ে মড্যুলেটরে প্রয়োগ হয়। এখানে একটা উপযোগী পদ্ধতিতে অডিও সিগনালটি ক্যারিয়ার ওয়েভের উপর সুপার ইমপোজ হয়। লব্ধ ওয়েভকে বলা হয় মড্যুলেটেড ওয়েভ অথবা রেডিও ওয়েভ এবং পদ্ধতিকে বলা হয় মড্যুলেশন। এই মড্যুলেশন পদ্ধতির কারণে অডিও সিগনালের ট্রান্সমিশন সম্ভব হয়। যেহেতু ক্যারিয়ার ফ্রিকুয়েন্সি খুবই উচ্চ থাকে সেহেতু অডিও সিগনাল দীর্ঘ দূরত্বে ট্রান্সমিট হতে পারে। ট্রান্সমিটার থেকে রেডিও ওয়েভকে ট্রান্সমিটিং অ্যানটিনাতে যুক্ত করা হয় এবং সেখান থেকে ওয়েভ স্পেসে বিকিরিত হয় এবং সর্বদিকে ছড়িয়ে যায়। এই রেডিও ওয়েভ আলোর বেগে অর্থাৎ 3 × 108m/sec বেগে ভ্রমণ করে। এই রেডিও ওয়েভগুলো হচ্ছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ।

চ্যানেল এবং নয়েজ সোর্স (Channel and Noise Source) : চ্যানেল শব্দটি দ্বারা মিডিয়ামকে বুঝানো হয় যার মধ্য দিয়ে ম্যাসেজ ট্রান্সমিটার থেকে রিসিভারে গমন করে। যেমন- রেডিও, ওয়্যার এবং ফাইবার অপটিক চ্যানেল। আবার কোনো সার্ভিস অথবা ট্রান্সমিশনের জন্য বরাদ্ধকৃত ফ্রিকুয়েন্সি রেঞ্জকে নির্দেশ করার জন্য চ্যানেল শব্দটিকে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। এভাবে একটি টেলিভিশন চ্যানেল 7 MHz-এর ব্যান্ড ওয়াইডথ দখল করে। অন্যদিকে একটি অ্যামপ্লিচিউড মড্যুলেশন ব্রডকাস্ট চ্যানেল 10 KHz এর ব্যান্ড ওয়াইডথ দখল করে।

ট্রান্সমিশন এবং রিসিপশনের প্রক্রিয়াকরণের সময় সিগনাল দুটি কারণে খারাপ হয়ে যেতে পারে। যেমন- (i) সিস্টেমের মধ্যে ডিস্টরশনের কারণে, (ii) সিস্টেমের মধ্যে নয়েজ প্রবেশের কারণে যা বিভিন্ন সোর্সসমূহ থেকে আসতে পারে। এই নয়েজ সিগনালের উপর সুপার ইমপোজ হয়। নয়েজের পরিমাণ তীব্রতর হলে সিগনাল-টু-নয়েজ পাওয়ার রেশিও এতই কমে যায় যে তা থেকে ম্যাসেজ উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং সেহেতু সিগনাল অব্যবহার্য হয়ে যায়। যদিও চ্যানেলের মধ্যে সিগনাল নয়েজ দ্বারা অধিক আক্রান্ত হয় তথাপি কমিউনিকেশন সিস্টেমের যেকোনো স্থানে সিগনালের সাথে নয়েজ যুক্ত হতে পারে। সিগনাল দুর্বল হলে নয়েজ সিগনালকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করে দিতে পারে।

রিসিভার (Receiver) : চ্যানেলের মাধ্যমে রিসিভিং অ্যান্টিনাতে পৌছনোর পর রেডিও ওয়েভ এতে ক্ষুদ্র e.m.f আবিষ্ট করে। এই ক্ষুদ্র ভোল্টেজ রেডিও রিসিভারে প্রয়োগ হয়। এখানে রেডিও ওয়েভ প্রথমে বিবর্ধিত হয়। তারপর ডিমড্যুলেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিগনালকে বের করে নেওয়া হয়। অডিও অ্যামপ্লিফায়ার দ্বারা সিগনালকে বিবর্ধন করা হয় ও সাউন্ড ওয়েভ পুনরোৎপাদন করার জন্য একে স্পিকারে প্রদান করা হয়। লাউড স্পিকার একে শব্দে রূপান্তরিত করে।


Post a Comment

0 Comments