ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফি-এর ধারণা আলোচনা করো এবং ড্রাইভার অ্যামপ্লিফায়ার, মেমরি সিস্টেম , রেকর্ডার-প্রিন্টার কি ? বর্ননা করো

ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফি-এর ধারণা ৭। ড্রাইভার অ্যামপ্লিফায়ার (Driver amplifier) ঃ

ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফি-এর ধারণা ড্রাইভার অ্যামপ্লিফায়ার (Driver amplifier) ঃ এ ব্লকের সার্কিটসমূহ ECG কে এমন এক লেভেলে বিবর্ধন করে, যেখানে এটি রেকর্ডারের

 উপর সিগন্যালকে যথাযথভাবে রেকর্ড করতে পারে। এর ইনপুট AC-coupled হওয়া উচিত, যাতে প্রি-অ্যামপ্লিফায়ার দ্বারা বিবর্ধিত অফসেট ভোল্টেজসমূহ এটির ইনপুটে দেখা না যায়। এ সকল DC ভোল্টেজগুলো যখন এ স্টেজ দ্বারা বিবর্ধিত হয়, তখন অবশ্যই একে স্যাচুরেট করতে পারে। ফ্রিকুয়েন্সি বৈশিষ্ট্য প্রদানের জন্য এ স্টেজটি আবার ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফের ব্যান্ডপাস ফিল্টারিংও সম্পাদন করে। প্রায়ই এর আবার একটি জিরো-অফসেট কন্ট্রোল থাকে, যা চার্ট পেপারের উপর সিগন্যালকে পজিশন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এ কন্ট্রোলটি আউটপুট সিগন্যালের DC লেভেলকে কন্ট্রোল করে ।
মেমরি সিস্টেম : বহু আধুনিক ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফ, ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামকে মেমরিতে সংরক্ষণ করে এবং তাদেরকে আবার পেপার চার্টের উপর প্রিন্ট আউটও করে। প্রথমে সিগন্যালকে অ্যানালগ-টু-ডিজিটাল কনভার্টারের (ADC) সাহায্যে ডিজিটাইজ করা হয় এবং তারপর প্রতিটি লিড থেকে স্যাম্পল নিয়ে মেমরিতে সংরক্ষণ করা হয়। কী-বোর্ডের মাধ্যমে রোগীর যে তথ্য প্রবেশ করানো হয়, তাও সংরক্ষণ করা হয়। মাইক্রো কম্পিউটার এ সংরক্ষণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
মাইক্রো কম্পিউটার  ঃ ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফের সার্বিক অপারেশন নিয়ন্ত্রণ করে মাইক্রোকম্পিউটার। একটি নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের সাহায্যে অপারেটর কয়েকটি অপারেশনের মুড নির্বাচন করতে পারে। যেমন- 6 টি ট্রান্সভার্স প্লেইন লিডের তিনটি 10-s সেগমেন্টের পর 6টি ফ্রন্টাল প্লেইন লিডের তিনটি যুগপৎ 10-S সেগমেন্ট নির্বাচিত করে আদর্শ 12 লিড ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম উৎপন্ন করার জন্য অপারেটর মাইক্রো কম্পিউটারকে প্রোগ্রাম করতে পারে। হার্ট রেট নির্ধারণ করা, কোনো প্রকারের অ্যারিদমিয়া শনাক্তকরণ, ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অক্ষরেখাসমূহ হিসাবকরণ এবং এ সকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ইন্টারভ্যাল নির্ধারণ করার জন্য কিছু কিছু মেশিনের মাইক্রো কম্পিউটার ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামের প্রাথমিক বিশ্লেষণও সম্পন্ন করতে পারে। একটি কী-বোর্ড এবং একটি আলফানিউমেরিক ডিসপ্লের সাহায্যে অপারেটর মাইক্রো কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করে।
রেকর্ডার-প্রিন্টার : এ ব্লকটি রেকর্ডকৃত ECG সিগন্যালের একটি হার্ড কপি সরবরাহ করে। এটি আবার অপারেটর কর্তৃক প্রবেশকৃত রোগীর আইডেন্টিফিকেশন, ক্লিনিক্যাল ইনফরমেশন এবং ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামের স্বয়ংক্রিয় অ্যানালাইসিসের ফলাফল প্রিন্ট আউট করে। বর্তমানে আধুনিক ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফগুলোতে থার্মাল অথবা ইলেকট্রোস্ট্যাটিক রেকর্ডিং কৌশল ব্যবহৃত হয়, যেখানে চলমান কাগজকে প্রিন্ট হেডের নিচে দিয়ে চালিত করা হয়। ডিজিটাইজড ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামগুলোকেও ম্যাগনেটিক ডিস্ক অথবা টেপের মতো স্থায়ী মেমরিতে স্টোর যায়।

ডক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট

বিভিন্ন প্রকারের ইসিজি ইলেকট্রোড (Different types of ECG electrodes) : বডি সারফেসের উপর বিভিন্ন পটেনশিয়াল রেকর্ডিং করার জন্য বছরের পর বছর বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোড সৃষ্টি হয়েছে। ECG রেকর্ডিং করার জন্য যে সর্বাধিক সাধারণ টাইপের সারফেস ইলেকট্রোড ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর আকৃতি আয়তাকার অথবা সারকুলার সারফেস বিশিষ্ট হয়ে থাকে। বৃত্তাকার সারফেস ইলেকট্রোটগুলোর ব্যাস 0.3-5cm পর্যন্ত দেখা যায়, তবে অধিকাংশের ব্যাস 1cm. রেঞ্জের মধ্যে থাকে। ইলেকট্রোড এবং ত্বকের (Skin) মধ্যে ইম্পিড্যান্স কমানোর জন্য কন্ডাকটিভ জেল (Gel) অথবা পেস্ট ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রোড তৈরিতে যে সকল পদার্থগুলো ব্যবহৃত হয়, তারা হচ্ছে জার্মান সিলভার, নিকেল সিলভার অথবা নিকেল প্লেটেড স্টিল। এগুলোকে ইলেকট্রোড জেলির সাহায্যে শরীরের সারফেসে প্রয়োগ করা হয়। স্বাভাবিক সাইজের এ সকল ইলেকট্রোডের কন্ট্যাক্ট ইম্পিড্যান্সের টিপিক্যাল ভ্যালু হচ্ছে প্রায় 2-5ks2 (যখন 10 Hz-এর পরিমাপ করা হয়)। ইলাস্টিক স্ট্র্যাপের সাহায্যে ইলেকট্রোডগুলোকে যথাস্থানে ধরে রাখা হয়। এগুলোকে বলা হয় লিম্ ইলেকট্রোড । ইউনিপোলার চেস্ট (Chest) লিডগুলোর জন্য সাক্শন-কাপ-ইলেকট্রোড (Suction-cup-electrode) ব্যবহৃত হয়। এর রিমটি ত্বকের সাথে সংস্পর্শে থাকে বলে এর কন্ট্যাক্ট ইম্পিড্যান্স উচ্চ থাকে। হার্টের উপরিভাগের পৃথক স্থানের বা দিকের ২টি ইলেকট্রোড গ্যালভেনোমিটারের সাথে সংযোগ করা হলে বৈদ্যুতিক প্রবাহ পাওয়া যাবে। এর ফলে দুটি ইলেকট্রোডের মধ্যে বিভব-পার্থক্য বা পটেনশিয়াল ডিফারেন্স সৃষ্টি হবে। উদাহরণস্বরূপ— একই সময় একটি ইলেকট্রোডের জন্য 1 মিলিভোল্টের (mv) তরঙ্গ (wave) এবং দ্বিতীয় ইলেকট্রোডের জন্য 0.2 মিলিভোল্টের তরঙ্গ সৃষ্টি হলে দুটি ইলেকট্রোডের রেকর্ডের পার্থক্য হবে 0.8mV

ইসিজি মেশিনের মেইনটেনেন্স পদ্ধতি  : একটি আদর্শ হস্পিটাল ECG মেশিন হচ্ছে দৃঢ় ইনস্ট্রুমেন্ট এবং খুবই সংকটাপন্ন মুহূর্তে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য হতে হয়। অনেক হসপিটালে অপারেটরগণ মেশিনের যত্ন নেয় না বললেই চলে। কিন্তু বর্তমানে অনেক হাসপাতালেই ECG টেকনিশিয়ান অথবা বায়োমেডিকেল ইকুইপমেন্ট টেকনিশিয়ান দ্বারা মাঝে মাঝে ECG মেশিনগুলো পরীক্ষা করানো হয় এবং প্রয়োজনবোধে ছোটখাটো মেরামতের কাজ সম্পন্ন করানো হয়।

দৈনিক বা সাপ্তাহিক কার্যগত পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত কার্যধারা নিম্নরূপ : ১। মেশিনটি অন (ON) করতে হবে এবং প্রায় এক মিনিটের জন্য একে গরম হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ২। ফাংশন সুইচকে RUN পজিশনে দিতে হবে এবং লিড সিলেক্টর সুইচকে STD-তে রাখতে হবে। তারপর লক্ষ করতে হবে ট্রেস উপস্থিত আছে কি না। 1m-V ক্যাল বাটনে বেশ কয়েকবার চাপ প্রয়োগ করা দরকার। তারপর লক্ষ করতে হবে (a) পালসের ভার্টিক্যাল এজ দৃশ্যমান কি না, (b), কমপক্ষে 10 mm ডিফ্লেকশন পাওয়ার জন্য সেনসিটিভিটি কন্ট্রোলকে অ্যাডজাস্ট করা যায় কি না, (c) পালসটি যথেষ্ট বর্গাকৃতি কি না। ৪। পজিশন কন্ট্রোলটিকে এর সমগ্র রেঞ্জব্যাপী অ্যাডজাস্ট করে লক্ষ করা দরকার স্টাইলাসটি (Stylus) লিমিটের মধ্যে যাওয়া-আসা করে কি না অথবা কাগজের উপরের এবং নিচের মার্জিনে থামে কি না। ৫। ক্যাবলের পেশেন্ট প্রান্তে সকল ইলেকট্রোড কানেক্টরগুলোকে একত্রে সর্ট করতে হবে এবং তারপর সকল 12 টি পজিশনে লিড সিলেক্টর সুইচকে ঘুরিয়ে দেখতে হবে। সুইচের সকল ক্ষেত্রেই কাগজের উপর একটি স্টেবল বেস লাইন দেখা যাবে।
 এ পরীক্ষার ফলে ক্যাবলের মধ্যে ওপেন ওয়্যার (Open wire) শনাক্ত করা যায়   যখন লিড সিলেক্টর STD তে এবং ImV ক্যাল বাটন চাপ দেয়া অবস্থায় থাকে, তখন সেনসিটিভিটিকে অবিকল 10 mm ডিফ্লেকশনের জন্য অ্যাডজাস্ট করতে হবে। চাপ দিয়ে 1mV ক্যাল বাটনকে ধরে রাখতে হবে। স্টাইলাসটি 10mm ডিফ্লেকশন দিবে এবং তারপর ধীরে ধীরে এর আদি অবস্থানে ফিরে আসবে (চিত্র দেখানো হয়েছে)। হ্রাসের হার 16 টি বৃহৎ ডিভিশনের (অর্থাৎ 3.2 S) মধ্যে 7 mm এর চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম ধীর হওয়া উচিত। এ পরীক্ষাটি দ্বারা মেশিনের লো-ফ্রিকুয়েন্সি রেসপন্স চেক করা হয়।

Post a Comment

0 Comments