আল্ট্রাসনিক নেবুলাইজার মেশিন কি ? কার্যপ্রণালি অ্যানিস্থিসিয়ার পরিচালনা প্রক্রিয়া এবং ধাপসমূহ বর্ণনা দাও

 



আল্ট্রাসনিক নেবুলাইজার মেশিনের কার্যপ্রণালি  : যখন কোনো চিকিৎসায় শ্বাসগ্রহণকৃত বায়ুতে অ্যারোসল হিসেবে পানি বা অন্য কোনো প্রকার ঔষধ (Medication) সাসপেন্ড করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন যে ডিভাইস ব্যবহার করা হয়, তাকে বলা হয় নেবুলাইজার। (around ১ চিকিৎসা কার্যে নেবুলাইজার হচ্ছে এমন একটি ডিভাইস, যা বায়ুপথে (Airways) তরল কুয়াশা (Liquid mist) আকারে রোগীকে ঔষধ প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়। এ যন্ত্রটি সাধারণত Cystic fibrosis, asthma এবং অন্যান্য শ্বসনতন্ত্রের রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। নেবুলাইজারকে Automizer-ও বলা হয়। এক্ষেত্রে তরল ঔষধের মধ্য দিয়ে বায়ু বা অক্সিজেন পাম্প করে তরল ঔষধকে বাষ্পে পরিণত করা হয়, যা পরে রোগী শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে গ্রহণ করে। নেবুলাইজারের মধ্যে অক্সিজেন (অথবা অন্য কোনো গ্যাস) এর একটি উচ্চগতিসম্পন্ন জেট দ্বারা পানি অথবা মেডিসিনকে পিকআপ করা হয় এবং তারপর এক বা একাধিক ব্যাফেল (Baffle) অথবা অন্যকোন পৃষ্ঠদেশের উপর নিক্ষেপ করে পদার্থটিকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য আকৃতিতে বিন্দু বা কণায় ভাঙা হয় এবং একে পরবর্তীতে একটি রেসপিরেটরের সাহায্যে রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হয়।
 এ প্রকার একটি নেবুলাইজার হচ্ছে আল্ট্রাসনিক নেবুলাইজার (Ultrasonic nebulizer) |নিবুলাইজার মেশিনগুলোতে সাধারণত ঘন তরল ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। কখনো কখনো এ মেডিসিন হয় চটচটে আঠালো ধরনের । মেডিসিনগুলো প্রায়ই স্টেরয়েড (Steroid) হয়ে থাকে এবং তাই পাকস্থলীতে গ্রহণের পরিবর্তে শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। ফলে এগুলো শুধুমাত্র ফুসফুস এবং শ্বসনতন্ত্রে ক্রিয়া করে। অন্যথায়, এ পরিমাণ Steroid সমগ্র শরীরব্যাপী সম্পৃক্ত হয়ে বিষপূর্ণ হয়ে যেতো। তরলকে ব্যবহারের জন্য মেশিনে ঢুকাতে হয়। 

ব্রঙ্কোডাইলেটরগুলো (Bronchodilators) যেমন- অ্যালবুটেরল (Albuterol) প্রায়ই ব্যবহৃত হয় । সচরাচর বাষ্পীকৃত মেডিসিন মাউথপিসের মতো টিউবের সাহায্যে শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। এর একটা সুবিধা হচ্ছে যে, মেডিসিনের সাথে পারিপার্শ্বিক বায়ু মিশতে পারে এবং বাস্টের অসুখকর (Unpleasantness) অবস্থা হ্রাস করে। তবে কখনো কখনে ইনহেলিং অ্যাপারেটাসগুলোর পরিবর্তে আদর্শ রবাবের ফেস মাস্ক ব্যবহার করা হয়। ফলে বয়স্ক বা ছোট শিশুদের জন্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরামবোধ হয়। স্টেরয়েড (Steroids) সহকারে ব্যবহারের পর যে ব্যক্তি নেবুলাইজার ব্যবহার করে, তাকে অবশ্যই পানি দিয়ে তার মুখ ধৌত করে নিতে হবে কারণ ঐ স্টেরয়েডগুলো মুখের ঈস্ট ইনফেকশন (Yeast infection) ঘটাতে পারে। ব্রঙ্কোডাইলেটরগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্য এটা সত্য নয়। তবে রোগী ইচ্ছা করলে অনেক ব্রঙ্কোডাইলেটিং ঔষধের অপ্রীতিকর স্বাদ এড়ানোর জন্য মুখ ধৌত করতে পারে। Coryza, pharyngitis, bronchitis ইত্যাদি রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আলট্রাসনিক নেবুলাইজার ব্যবহৃত হয়।
ভেন্টিলেটরস এবং রেসপিরেটরস (Ventilators and respirators) : এ ডিভাইসগুলোও শ্বসন বা রেসপিরেটরি থেরাপি ইকুইপমেন্টের অন্তর্গত। ফুসফুসীয় শাখাতে আর্দ্রতা অথবা অ্যারোসল মেডিকেশন (Aerosol medications) সরবরাহ করার জন্য এবং ফুসফুসের বায়ু চলাচল ব্যবস্থা (Ventilation) উন্নত করার জন্য যে ইকুইপমেন্টগুলো অবিরাম বা সবিরামভাবে ব্যবহৃত হতে পারে, সে ইকুইপমেন্টগুলোকে বর্ণনা করার জন্য ভেন্টিলেটর এবং রেসপিরেটর পদগুলো আন্তঃবিনিময় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শ্বাস গ্রহণের সময় বিভিন্ন গ্যাস অথবা গ্যাস মিশ্রণ (বাতাস, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, হিলিয়াম ইত্যাদি) দ্বারা ফুসফুসকে ফুলানোর জন্য ক্লিনিক্যাল সেটিং-এ অধিকাংশ ভেন্টিলেটরগুলো পজিটিভ প্রেসার ব্যবহার করে। শ্বাস ত্যাগ সচরাচর প্যাসিভ, যদিও কোনো কোনো অবস্থায় ধমনিয় অক্সিজেন চাহিদার উন্নতিকল্পে শ্বাস ত্যাগের সময়ও প্রেসার প্রয়োগ করা যেতে পারে। সাধারণভাবে ব্যবহৃত অধিকাংশ রেসপিরেটরগুলোকে Assistor-controller হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করা হয় এবং এগুলোকে তিনটি ভিন্ন মুডের যে-কোনো একটি মুডে অপারেট করা যায়। 

এ মুডগুলো পদ্ধতিগতভাবে ভিন্ন থাকে, যা দ্বারা প্রশ্বাস বা শ্বাস গ্রহণ শুরু হয়। এ তিনটি মুড হলো : (ক) অ্যাসিস্ট মুড (Assist mode) (খ) কন্ট্রোল মুড (Control mode) (গ) অ্যাসিস্ট-কন্ট্রোল মুড (Assist-control mode) 14

বারোমেডিক্যাল হুন অ্যাসিস্ট মুড ঃ অ্যাসিস্ট মুডে রোগী কর্তৃক প্রশ্বাস ট্রিগারড হয়। রোগী যখন প্রতিবার শ্বাস নিতে চেষ্টা করে, তখন সামান্য নেগেটিভ প্রেসারের সৃষ্টি হয় এবং এ প্রেসারে একটি প্রেসার সেন্সর সাড়া প্রদান করে এবং যন্ত্রকে ট্রিগার করে ফুসফুসকে স্ফীত (Inflate) করে। এভাবে রোগী যখন শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে চায়, তখন রেসপিরেটরটি তাকে শ্বাস গ্রহণ করতে সাহায্য করে থাকে। যন্ত্রটিকে ট্রিগার করার জন্য রোগীর প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টার পরিমাণকে নির্ধারণ করার জন্য একটি সেনসিটিভিটি অ্যাডজাস্টমেন্ট সরবরাহ করা হয়। যে সকল রোগী তাদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম কিন্তু সাহায্য ছাড়া উপযুক্ত পরিমাণ বায়ু টেনে নিতে অক্ষম অথবা যাদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়, তাদের জন্য এ অ্যাসিস্ট 'মুড ব্যবহৃত হয়।
 কন্ট্রোল মুড ঃ এ মুডে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রিত হয় একটি টাইমার দ্বারা, যাকে আকাঙ্ক্ষিত শ্বসন রেটে সেট করে দেয়া হয়। যে সকল রোগী নিজে নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস চালাতে অক্ষম, তাদের জন্য কন্ট্রোলড ভেন্টিলেশনের দরকার হয়। এ মুডে রোগীর শ্বসনের উপর রেসপিরেটরটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং রোগীর পক্ষ হতে কোনো শ্বসন সহায়ক প্রচেষ্টার জন্য সাড়া প্রদান করে না। 
অ্যাসিস্ট-কন্ট্রোল মুড ঃ অ্যাসিস্ট মুডের মতো অ্যাসিস্ট-কন্ট্রোল মুডে রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার প্রচেষ্টার উপর যন্ত্রটি সাধারণত ট্রিগার হয়। কিন্তু যদি পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে ব্যর্থ হয়, তবে ফুসফুসকে ফুলানোর জন্য একটি টাইমার স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রটিকে ট্রিগার করে। এভাবে যতক্ষণ পারে রোগী তার নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এরূপ কার্য করতে যন্ত্রটি প্রায়ই ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। রোগী ব্যর্থ হলে মেশিনটি তার পক্ষে কার্য চালাতে সক্ষম। চার বর্ণিত এ তিনটি মুড ছাড়াও প্যানেলের উপর রক্ষিত হস্তচালিত কন্ট্রোলারের সাহায্যে অনেক রেসপিরেটরকে ট্রিগার করা যেতে পারে। একবার যখন প্রশ্বাস বা শ্বাসগ্রহণ ট্রিগার হয়, তখন নিম্নের শর্তাবলির যে-কোনো একটি সম্পন্ন হওয়া অবধি ফুসফুসে বাতাস ভর্তি হতে থাকে। Herairas-এর মধ্যে সরবরাহকৃত গ্যাস একটি পূর্বনির্ধারিত চাপে পৌঁছে। 

অ্যানিস্থিসিয়ার পরিচালনা প্রক্রিয়া এবং ধাপসমূহ ঃ 1846 সালে অ্যানিস্থিসিয়া আবিষ্কার হলেও এর গভীরতা মূল্যায়নে সমস্যা ছিল। অ্যানিস্থিসিয়ার গভীরতা (Depth of anesthesia) নির্ধারণের জন্য অ্যানিস্থেটিস্টগণ রোগীর পর্যায়ক্রমিক শারীরিক উপসর্গের উপর নির্ভর করে থাকে। 1937 সালে Arthur e Guedel অ্যানিস্থিসিয়ার বিভিন্ন স্টেজের বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করেন এবং সাধারণভাবে এটি সকলের নিকট গৃহীত হয়। তবে বর্তমানে Bispectral Index (BIS) মনিটর নামে একটি নিউরোফিজিওলজিক্যাল মনিটরিং ডিভাইস দ্বারা রোগীর ইলেকট্রোএনস্যাফালোগ্রাম বিশ্লেষণ করে অ্যানিস্থিসিয়ার গভীরতা (অ্যানিস্থিসিয়ার সময় চেতনার মাত্রা মূল্যায়ন) পরিমাপ করতে পারা যায়।

 নিম্নে অ্যানিস্থিসিয়ার ধাপ (Stages) এবং অস্তিত্বের স্তর (Planes) সমূহের বর্ণনা দেয়া হলো ঃ অ্যানিস্থিসিয়াকে কখনো কখনো ধাপ বা স্টেজে ভাগ করা হয় এবং কিছু কিছু স্টেজকে আবার অস্তিত্বের স্তরে ভাগ করা হয়। যেমন— স্টেজ-I (Stage-I) ঃ অ্যানিস্থিসিয়ার এ ধাপকে বেদনাবোধহীনতার ধাপ (Statge of analgesia) অথবা চিনতে বা বুঝতে না পারার ধাপ (Stage of disorientation) বলা হয়। অ্যানিস্থিটিক এজেন্ট প্রয়োগ এবং চেতনা বিলোপ (Loss of consciousness) এ দুইয়ের মধ্যবর্তী কালকে বলা হয় স্টেজ-I অ্যানিস্থিসিয়া । 

স্টেজ-II (Stage-II) : অ্যানিস্থিসিয়ার এ স্টেজকে উত্তেজনার অথবা বিকারে স্টেজও (Stage of excitement or of delirium) বলা যায়। চেতনা বা অনুভূতি বিলোপ হওয়ার পর থেকে স্বয়ংক্রিয় শ্বাসপ্রশ্বাসের শুরু পর্যন্ত কালই হলো স্টেজ-II অ্যানিস্থিসিয়া। এ ধাপে অক্ষিপক্ষ প্রতিবর্তী বা রিফ্লেক্স (Eyelash reflex) অদৃশ্য হয় কিন্তু অন্যান্য রিফ্লেক্স অটুট থাকে এবং কাশি, বমিভাব ও অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া ঘটতে পারে, শ্বাসরুদ্ধসহ অনিয়মিত শ্বসন হতে পারে। এ স্টেজটি ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে এবং রোগীর বিপদ এড়াতে অধিকাংশ অ্যানিস্থিটিক প্রটোকলে এ সময়কালকে যতদূর সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করা হয় ।

 স্টেজ-III (Stage-III) : স্বয়ংক্রিয় শ্বসনের শুরু থেকে শ্বসনযন্ত্রের অসাড়তা পর্যন্ত এ স্টেজকে সার্জিক্যাল অ্যানিস্থিসিয়ার স্টেজ (Stage of surgical anesthesia) বলা হয়। কারণ স্টেজ-III অ্যানিস্থিসিয়া এমন একটি লেভেল যেখানে সার্জারি সম্পন্ন করা যেতে পারে। স্টেজ-II থেকে স্টেজ-III তে অবস্থান্তর সচরাচর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দ্বারা নির্দেশিত হয়। যেমন— রোগীর নিয়মিত শ্বসন ফিরে আসা, স্টেজ-II-তে বড় হয়ে যাওয়া পিউপিল সংকুচিত হওয়া, রোগী কর্তৃক অনৈচ্ছিক আলোড়ন অথবা প্রলাপ বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। 

স্টেজ-III অ্যানিস্থিসিয়াকে চারটি স্তরে (Plane) ভাগ করা হয়েছে : (ক) Plane 1 stage III : স্বয়ংক্রিয় শ্বসনের শুরু থেকে অক্ষিগোলক আলোড়নের নিবৃত্তি পর্যন্ত। অক্ষিপল্লব রিফ্লেক্স থাকবে না, গলাধঃকরণ প্রতিবর্তী ক্রিয়া (Reflex) অদৃশ্য হবে, মাঝেমধ্যে অক্ষিগোলক মুভমেন্ট ঘটতে পারে কিন্তু কনাজংটিভাল রিফ্লেক্স এ স্তরের শেষে থাকবে না। অক্ষিগোলক আলোড়নের নিবৃত্তি থেকে ইন্টারকোস্টাল পেশির অসাড়তার শুরু পর্যন্ত। স্বরযন্ত্রের রিফ্লেক্স হারিয়ে যাবে, কর্ণিয়ার রিফ্লেক্স অদৃশ্য হবে, অশ্রু ক্ষরণ বৃদ্ধি পাবে (Light anesthesia-এর দরকারি উপসর্গ), শ্বসন স্বয়ংক্রিয় এবং নিয়মিত হবে। 
Plane 3 stage-III : ইন্টারকোস্টাল পেশির অসাড়তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। মধ্যচ্ছদাকারী শ্বসন (Diaphragmatic respiration) বিদ্যমান, কিন্তু ইন্টারকোস্টাল অসাড়তা ক্রমবর্ধমান হবে। (ঘ) Plane 4 stage-III : সম্পূর্ণ ইন্টারকোস্টাল অসাড়তা ( intercostal paralysis) থেকে মধ্যচ্ছদায় অসাড়তা (apnoea) পর্যন্ত। 

স্টেজ-IV (Stage-IV) : শ্বসন বন্ধ হওয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। অ্যানিস্থিটিক ওভারডোজ শ্বসনরোধ এবং ভ্যাসোমোটর ধ্বংসসহ মেডুল্যারি প্যারালিসিস ঘটাতে পারে। পিউপিল ব্যাপক প্রসারিত হয় এবং পেশিসমূহ শিথিল হয়ে যায়।

Post a Comment

0 Comments