টেলিভিশন সম্প্রচার কৌশল বর্ননা করো গণযােগাযােগ মাধ্যমে ব্যবহার এবং টেলিভিশন সম্প্রচার কৌশলের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ননা করো

https://www.blogger.com/blog/post/edit/7055788811792244960/454272798610637116


টেলিভিশন সম্প্রচার কৌশল : সম্প্রচার এমন একটি কৌশল, যার মাধ্যমে কোনাে একটি ইলেকট্রনিক গণযােগাযােগ মাধ্যমে ব্যবহার করে বিচ্ছিন্ন দর্শকদের অডিও বা ভিডিও সামগ্রী বিতরণ করা যায়। টেলিভিশনের মূল ধারণা হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে। ট্রান্সমিট করা। মূলত তিনটি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সৃষ্ট হয় টেলিভিশনের আউটপুট টিভি ক্যামেরা, যার কাজ হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে তড়িৎ চৌম্বকীয় (ইলেকট্রোম্যাগনেটিক) সংকেতে রূপান্তর করা। টিভি ট্রান্সমিটার যার কাজ হচ্ছে এই সংকেতকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করা এবং টিভি সেট, যার কাজ হচ্ছে এই সংকেত গ্রহণ করে তাকে আগের ছবি ও শব্দে রূপান্তরিত করা। সাধারণত ক্যামেরা দিয়ে তােলা ছবিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়  যথা- ১। স্থিরচিত্র, ২। চলচিচত্র। স্থিরচিত্রের জন্য সাধারণ ক্যামেরা ও চলচ্চিত্রের

জন্য মুভি/ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে অনেকগুলাে স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় চলচ্চিত্র । ভিডিও ক্যামেরা দ্রুতগতিতে পরপর অনেকগুলাে স্থিরচিত্র (24 Pic/sec or more) গ্রহণ করে। এই ছবিগুলােকে যখন একই গতিতে পরপর প্রদর্শন করা হয় তখন আমাদের চোখে এগুলাে চলচ্চিত্র বলে মনে হয়। ফ্রেমে এই দ্রুতগতিতে ছবি পরিবর্তনের কারিগরি কৌশলটি আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। চলচ্চিত্রকে খুবই স্লো মােশনে দেখলে এসব স্থির চিত্রগুলােকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়  অ্যানালগ টিভি ক্যামেরা এসব ছবির পিক্সেলকে সাধারণত ৫২৫টি লাইনে ভাগ করে লাইন বাই লাইন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করে। একই সাথে শব্দতরঙ্গকে আলাদা সিগন্যালের মাধ্যমে প্রেরণ করে। ছবি ও শব্দের সিগন্যাল অ্যান্টেনা/ক্যাবল/স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভি গ্রহণ করে বিশেষ পদ্ধতিতে আবার ছবি ও শব্দে রূপান্তরিত করে।


টিভি ব্রডকাস্টিং সিস্টেমের বৈশিষ্ট্যের তালিকা টেলিভিশন সম্প্রচার কৌশলের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ (i) অডিও ভিজ্যুয়াল মাধ্যম ও টেলিভিশনের মাধ্যমে ছবি দেখা যায় এবং এর সাথে শব্দও শােনা যায়। তাই সম্প্রচার কৌশলের মধ্যে অডিও সিগন্যাল ও ভিডিও সিগন্যালকে এমনভাবে মডিফাই করতে হয়, যেন সকল ধরনের টেলিভিশনে এটা সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়। (i) অন্যান্য মাধ্যমের সাথে সামঞ্জস্যতা ও বর্তমানে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। তাই সপ্রচার কৌশল এমন হতে হবে যেন সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান টেলিভিশনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে প্রচার উপযােগী হয়। (ii) প্রশস্ত এলাকা এবং উচচ বিশ্বাসযােগ্যতা ও টেলিভিশন সম্প্রচার এমন একটি সর্বজনীন যােগাযােগ মাধ্যম, যা বিশ্বকে বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত করেছে। এটি আমাদের সমাজকে একটি তথ্যভিত্তিক সমাজে পরিণত করেছে। এটি জ্ঞানকে মানবিক করে মানসিক দিগন্তকে বিস্তৃত করেছে এবং তাদেরকে বিশ্বের নাগরিক হিসেবে মনে করতে শিখিয়েছে। এটির প্রশস্ততা এবং বিশ্বাসযােগ্যতা এমন পর্যায়ে পৌছে গেছে, যা একে রাজনীতি, ক্রীড়া, শিল্প, ব্যক্তিত্ব, ঘটনা এবং ধারণার জন্য বিশ্ব প্রজন্মের কাছে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত করেছে। (iv) আকর্ষণীয় মাধ্যম ও বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশন শাে, মিউজিক শশা, জনপ্রিয় ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার প্রচারের মাধ্যমে সম্প্রচার কৌশল আকর্ষণীয় মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। (v) নিটবর্তী মাধ্যম ও টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থায় টেলিভিশনের পর্দা খুব ছােট হওয়ায় এবং সামান্য দূরত্ব থেকে দর্শক অনুষ্ঠান উপভােগ করায় দর্শকদের মধ্যে অনুষ্ঠান সম্পর্কে একটি বাস্তব আবহ তৈরি হয়। (vi) পারিবারিক বিনােদনের মাধ্যম ও পরিবারের সকল সদস্য একসাথে বসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে থাকে। এটা এখন পারিবারিক বিনােদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। (vii) গণতান্ত্রিক মাধ্যম ও টিভি সম্প্রচার ব্যবস্থা সকল মানুষের জন্য একটি সহজলভ্য গণতান্ত্রিক মাধ্যম। এর মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গণতান্ত্রিক তথ্য, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং সাহিত্য ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়। বেশিরভাগ টেলিভিশন প্রােগ্রাম তৈরি করা হয় সাধারণ মানুষের জন্য। (vii) বিজ্ঞাপনের প্রভাব ও বর্তমানে টেলিভিশন সম্প্রচার পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। টেলিভিশনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রি করে এবং বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে তারা বিশাল পরিমাণে সম্ভাব্য ও BHচাত্যাহাদতছে তাদের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে অবহিত করতে পারে।

প্রযােজক রুমের কাজ : প্রযােজকের কাজের বর্ণনা করার সেরা উপায় হলাে ফুটবল রেফারেন্স ব্যবহার করা। প্রযােজক প্রধান প্রশিক্ষকের মতাে। প্রধান প্রশিক্ষক যেমন নির্দেশনা দিয়ে খেলােয়াড়দের দিয়ে খেলা পরিচালনা করেন, প্রযােজকও তেমনিভাবে শিল্পী, কলাকুশলীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেন। একজন প্রযােজকই একটি প্রােগ্রামের বস। কোনাে একজন প্রযােজকের একটি প্রােগ্রাম ভালাে হলে তার সমস্ত ক্রেডিট প্রযােজক পেয়ে থাকে, আবার খারাপ হলে তার সমস্ত দায়ভার প্রযােজককেই নিতে হয়। একজন প্রযােজকের সাংগঠনিক দক্ষতা প্রয়ােজন। ভিডিও প্রডাকশনের সময় সকল প্রকার প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে প্রেসারের মধ্যে থেকেও ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হয়। ভিডিও প্রােডাকশনের শুরুতে প্রযােজক সকল কলাকৌশলীদের দায়িত্ব ও কাজ বণ্টন করে দেন এবং সেই কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়ােজনীয় দিক নির্দেশনা পূর্বেই প্রদান করেন। কাজ করতে গিয়ে কোথাও কোনাে সমস্যা তৈরি হলে সেগুলাে সমাধানের প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রযােজকের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুম থাকে। এই রুমকে প্রযােজক রুম বলা হয়। প্রযােজক রুম থেকেই প্রযােজক তার সমস্ত কাজ করে থাকে। প্রযােজক রুমে প্রযােজকের জন্য প্রয়ােজনীয় সুযােগ-সুবিধা যেমন- বাথরুম, বেসিন শােয়ার জায়গা, বসার জন্য পর্যাপ্ত আসন ব্যবস্থা থাকে। বিভিন্ন ফাইলপত্র ও সরঞ্জামাদি রাখার জন্য পর্যাপ্ত আলমারি ও ফাইল কেবিনেট থাকে। অতিথি ও কলাকুশলীদের জন্য সুসজ্জিত আরাম কেদারা থাকে। সার্বক্ষণিক একজন পিয়ন থাকে। প্রযােজক রুমে টেলিভিশন, কিম্পউটারসহ ইন্টারনেট সুবিধা থাকে।

থিয়েটার রুমের বর্ণনা : থিয়েটার রুম হচ্ছে এমন একটি বিল্ডিং বা এলাকা, যেখানে নাটকীয় কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করা হয় বা চলমান ছবি (সিনেমা) দেখানাে হয়। বর্তমানে শহুরে এলাকায় চলাচলের রাস্তা আছে এমন জায়গায় থিয়েটার রুম তৈরি করা হয়। এমন অবস্থানের জন্য, বিন্ডিং ফ্রেম নির্মাণ থেকে মেঝে, দেয়াল এবং সিলিং বিচ্ছিন্ন করে বিরােধী কম্পন সহায়তার সাথে সম্পূর্ণ ভাসমান গঠন হিসেবে পরিচিত একটি উচ্চ গ্রেড শব্দ নিরােধক নির্মাণ করে থিয়েটার রুমের শান্ততা নিশ্চিত করা হয়। শব্দ নিরােধক সিস্টেমগুলাে এমনভাবে নির্মাণ করা উচিত যাতে থিয়েটার রুমে বাইরের কোনাে শব্দ প্রবেশ না করে আবার থিয়েটার রুমের শব্দ বাইরে না যায়। থিয়েটার রুমে নাটকীয় কর্মদক্ষতা প্রদর্শনের জন্য মঞ্চ থাকে আবার চলমান ছবি (সিনেমা) প্রদর্শনের জন্য বড় পর্দা থাকে। দর্শকদের জন্য আরামদায়ক আসন থাকে। 


Post a Comment

0 Comments