কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বিস্তারিত বর্ননা।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বিস্তারিত বর্ননা : কম্পিউটার হচ্ছে এমন এক অত্যাশ্চর্য ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র, যার মাধ্যমে মানবজীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় সকল সমস্যার সমাধান করা যায়। সমস্যা সমাধানের জন্য এক্ষেত্রে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। হার্ডওয়্যার হচ্ছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আর সফটওয়্যার হচ্ছে সে-সব যন্ত্রাংশ চালাবার জন্য লেখা নির্দিষ্ট সংকেত বা কোড। হার্ডওয়্যার কীভাবে কী করবে, সেটি নির্ধারণ করে সফটওয়্যার, যাকে আমরা কম্পিউটার প্রােগ্রামও বলে থাকি। কম্পিউটার প্রােগ্রাম হচ্ছে এক বিশেষ ধরনের ভাষায় লেখা সংকেত, যেগুলো সাজানাে থাকে এমনভাবে যাতে করে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সহজেই বুঝতে পারে তাকে ঠিক কোনাে কাজটা কীভাবে করতে হবে।

পৃথিবীতে মানুষের সাথে মানুষের যােগাযােগের জন্য যেমন অনেক ভাষা আছে, তেমনিকম্পিউটারের জগতেও অনেক ভাষা আছে, যেগুলােকে প্রােগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বলে। যেমন- সি, সি++, জাভা, পাইথন, পিএইচপি,ভিজুয়াল বেসিক, জাভা, সি শার্প, পার্ল, পিএইচপি, পাইথন, রুবি ইত্যাদি। এসব ভাষার যে-কোনাে একটি বেছে নিয়ে সেই ভাষার নিয়মকানুন মেনে ঠিকমতাে কোড লিখলে তৈরি হয়ে যাবে কম্পিউটার প্রােগ্রাম বা সফটওয়্যার। তবে ভাষার নিয়মকানুন ঠিক রেখে শুধু কোড লিখে গেলেই সেটি প্রােগ্রাম হবে না, সাথে অবশ্যই যুক্তি বা লজিকও লাগবে । প্রােগ্রাম লেখার সময় প্রােগ্রামারকে তিনটি প্রধান কাজ করতে হয়। প্রথমে তাকে বুঝতে হয় যে সে আসলে কী করতে যাচ্ছে, মানে তার প্রােগ্রামটি আসলে কী কাজ করবে। তারপর চিন্তাভাবনা করে এবং যুক্তি ব্যবহার করে অ্যালগরিদম দাঁড় করাতে হয়, মানে- লজিকগুলাে ধাপে ধাপে সাজাতে হয়। সর্বশেষ কাজটি হচ্ছে অ্যালগরিদমটাকে কোনাে একটি প্রােগ্রামিং ভাষায় রূপান্তর করা, কে)) বল কোডিং করা। একেক ধরনের কাজের জন্য একেক ল্যাংগুয়েজ বেশি উপযােগী। প্রােগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের প্রথম দিকে অর্থাৎ মেশিন ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের জন্য প্রােগ্রাম লেখা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর, সময়সাপেক্ষ এবং সীমিত পরিসর। কিন্তু আজকের কম্পিউটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন। অর্থাৎ কম্পিউটার দিয়ে সমস্যা সমাধান করার জন্য মানুষকে হাজার হাজার ইনস্ট্রাকশন বা কমান্ড মুখস্থ করতে হয় না, সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন (Grammar) মেনে চলতে হয় না। বর্তমানে কম্পিউটার মানুষের কথাও (Speech) শনাক্ত (Recognize) করতে পারে এবং সে নির্দেশ অনুযায়ী সমস্যার সমাধান করতে পারে। কম্পিউটারের পাশাপাশি প্রােগ্রামিং ল্যাংগুয়েজগুলাের এ ধরনের উন্নতি ও বিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে বা পর্যায়ে প্রােগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন, সংকোচন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে। মূলত ৫টি পর্যায় (Generation) অতিক্রম করে আজকের এসব সহজ, সরল (Simple), দক্ষ (Efficient) ও সর্বজনীন প্রােগ্রামিং ল্যাংগুয়েজগুলাের আবির্ভাব।

পর্যায়গুলাে হল-  প্রথম পর্যায় (1st generation) ও মেশিন ল্যাংগুয়েজকে প্রথম পর্যায়ের ল্যাংগুয়েজ (1st generation languag@ হলে। Electrical Signal এর ON-OFF state দ্বারা Binary করে, বিভিন্ন ইনস্ট্রাকশনসমূহকে oppoe এ পরিণত করে প্রােগ্রামিং হলে তাকে প্রথম পর্যায়ের প্রােগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বলে। একে লাে লেভেল ল্যাংগুয়েজ (Low evel language) ও বলা হয়।

কম্পিউটার প্রােগ্রাম (Computer program) ঃ কম্পিউটার প্রােগ্রাম হচ্ছে কম্পিউটারে প্রদনির্দেশনার সমষ্টি, যার মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে মানুষের বাস্তব জীবনের প্রায় সকল সমস্যার সমাধান করা যায়। কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন- মনিটর, কী-বাের্ড ইত্যাদি হচ্ছে হার্ডওয়্যার। অপরদিকে প্রােগ্রাম হচ্ছে সফটওয়্যার। যে সমস্ত প্রােগ্রাম ক্যালকুলেশন, ওয়ার্ড প্রসেস, গেম খেলার মতাে ইউজারের বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করে থাকে তাদেরকে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে। আর যে-সব প্রােগ্রামের মাধ্যমে কম্পিউটার নিজেকে নিজে ম্যানেজ করে তাদেরকে সিস্টেম সফটওয়্যার বলে। যেমন- Windows, Linux, Unix, Xerix ইত্যাদি।

কম্পিউটার প্রােগ্রামের উদাহরণ: মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেস, এডােব ফটোশপ, ইলাসট্রেটর, অটোক্যাড,মজিলা ,ফায়াফক্স, গােগল ক্রোম, অ্যান্টিভাইরাস, এটিউব ক্যাচার, উইনরার, টেরাকপি, বিভিন্ন ভিডিও গেমস ইত্যাদি। কম্পিউটারের জন্য কিছু কিছু ক্ষতিকর প্রােগ্রামও রয়েছে যেগুলাে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারসমূহের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে। যেমন- ভাইরাস, মেলওয়্যার, স্পাইওয়্যার ইত্যাদি। কম্পিউটার প্রােগ্রামের ব্যবহার এতই ব্যাপক যে তার কোনাে হিসাব নেই। মানবজীবনের সাথে সম্পর্কিত এমন কোনাে ক্ষেত্র নেই যেখানে কম্পিউটার প্রােগ্রামের ব্যবহার নেই। আমরা ছােটবেলায় ভিডিও গেম খেলেছি, কম্পিউটার গেমের আগে। ঐখানেও প্রােগ্রামিং এর ব্যবহার ছিল। ছােট ছােট গেমগুলাে খেলার জন্য ভিডিও গেমকে ইনস্ট্রাকশন দিতে হয়েছিল। ঐ ইনস্ট্রাকশনগুলােও হচ্ছে প্রােগ্রামিং। আমরা এখন কম্পিউটার গেম খেলি । ভিডিও গেম থেকে অনেক উন্নত। এখানে ও প্রােগ্রামিং। আমরা টিভি দেখি। আসাদের টিভিগুলােতেও এখন অনেকগুলাে প্রােগ্রাম রয়েছে। এক চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেলে যেতে, টিভি, ভিসিডি-এ ইনপুটগুলাে পরিবর্তন, পর্দায় ভিডিও দেখানাে, এগুলাের জন্যও প্রােগ্রাম লিখতে হয়েছে। আমরা মুভি দেখি, এখনকার মুভিগুলােতে যতটুকু না ক্যামেরার কাজ, তার থেকে বেশি হচ্ছে অ্যানিমেশনের কাজ। আর তা করা হয় প্রােগ্রামিং দিয়ে। ক্যামেরায় ছবি উঠানাে, তার পেছনেও কাজ করে এই প্রােগ্রামিং। আমাদের হাতের ডিজিটাল ঘড়িটির পেছনে কাজ করে প্রােগ্রামিং। আমরা মেডিকেলে গেলে আমাদের অনেকগুলাে টেস্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঐ টেস্টগুলাে করা হয় কতগুলাে মেশিন দিয়ে। মেশিনগুলাে কাজ করে কতগুলো ইনস্ট্রাকশন এর উপর, প্রােগ্রামের উপর। কোনাে রােগ এনালাইসিস করার জন্য ব্যবহার করা হয় প্রােগ্রামিং। রােগ থেকে প্রতিষেধক তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয় প্রােগ্রামিং।
আমরা এখন প্রায় পণ্যই ঘরে বসে কিনতে পারি। আমরা একটা ওয়েব সাইট ভিজিট করি, আমরা পেমেন্ট পরিশােধ কৰি ৰবকিছুর পেছনেই এই প্রােগ্রামিং । রােবট একটা জড় বস্তু, যদি না তাতে কোনাে ইনস্ট্রাকশন না থাকে। ইনস্ট্রাকশনগুলাে লেখা হয় প্রােগ্রামিং করে। আর কঠিন সব কাজ করতে এই রােবট ব্যবহার করা হয়। এমনকি ন্যানাে রােবট ব্যবহার করে মানুষের শরীরের ভেতরের কোনাে কোষ ধ্বংস করার জন্য এই রােবট ব্যবহার হয়। এগুলাে ছাড়াও আর হাজার হাজার ফিল্ড রয়েছে, যেখানে প্রােগ্রামিং ব্যবহার।

Post a Comment

0 Comments